পল্টন থানায় জাল-জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় অ্যাসরোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আসাদুল ইসলাম ও পরিচালক মোঃ আমির হোসাইন গত ১৯ মার্চ ঢাকার সিএমএম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন।
এ মামলায় জামিন আসামীরা বাদীকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (২৩ মার্চ) এ মামলার বাদী আমিনুল ইসলাম এমন তথ্য জানান। তিনি জানান বিগত ৫ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও দুই আসামি আসাদুল ও আমিরের জামিনের আদেশের কাগজ হাতে পাননি। শুধু তাই নয় তাদের চলাফেরার পথে মামলা তুলতে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে আসামিপক্ষ।
বাদীর অভিযোগ থেকে জানা যায়, ‘মেসার্স ভাই ভাই ট্রেডার্সের কর্ণধার আমিনুল ইসলাম একজন পাথর ব্যবসায়ী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বেশকিছু মেগা প্রকল্পে পাথর সরবরাহ করে আসছেন। আর আসাদুল ইসলাম ও আমির হোসাইন দুজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। ২০১৮ সালের জুন মাসে তিনজন যৌথভাবে বিদেশ থেকে পাথর আমদানির ব্যবসা শুরু করেন। চুক্তি অনুযায়ী কে কতটুকু লভ্যাংশ পাবেন সেটাও লিখিত করা হয়। ব্যবসা শুরু করতে ভুক্তভোগী আমিনুল ইসলাম প্রথমে ১২ কোটি তিন লাখ এবং পরবর্তীতে আরও দুই কোটি পৃথক দুটি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন।
এসময় আরও সাতটি চেকের পাতা তার কাছ থেকে নেওয়া হয়। দীর্ঘদিন পাথর আমদানি না করা হলে আমিনুল ইসলাম তাদের কাছে টাকা ও চেক ফেরত চান। কিন্তু অ্যাসরোটেক্স গ্রুপের দুই কর্মকর্তা তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। তাদের আচরণে সন্দেহ হলে আমিনুল ইসলাম ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, যৌথ অ্যাকাউন্ট হলেও তার অজান্তেই ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী আমিনুল ইসলাম দীর্ঘদিন তাদের কাছে ধরনা দিলেও টাকা ফেরত পাননি। সবশেষ তিনি আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিকে। দীর্ঘ তদন্তের পর গত বছরের শেষদিকে সিআইডি প্রতিবেদন দাখিল করে।
এরপর গত বছরের শেষ দিকে মামলার তদন্ত শেষে ‘অ্যাসরোটেক্স গ্রুপে’র এমডি ও পরিচালকের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় সিআইডি। তাতে বলা হয়, পাথর আমদানির ব্যবসায়িক পার্টনার হয়ে ভুক্তভোগী আমিনুল ইসলাম দুই দফায় প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে অ্যাসরোটেক্স গ্রুপের অ্যাকাউন্টে জমা দেন। যা যৌথ অ্যাকাউন্ট হলেও প্রতিষ্ঠানের এমডি ও পরিচালক জালিয়াতি মাধ্যমে টাকাগুলো তুলে আত্মসাৎ করেন; সিআইডির ফরেনসিকে এমন প্রমাণ মিলেছে।
ভুক্তভোগী আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন প্রজেক্টে পাথর সাপ্লাই দিয়ে আসছিলাম। অ্যাসরোটেক্স গ্রুপের এমডি ও পরিচালকের সঙ্গে ব্যবসায় জড়িত হওয়ার পর তারা আমার বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে। বর্তমানে আর্থিক সংকটে পরিবার নিয়ে হতাশায় ভুগছি। আমিনুল বলেন, ‘ওই দুজনের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছি তা প্রত্যাহার করে নিতে আমাকে অনবরত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি গত ২৯ ফেব্রুয়ারি আমি হাইকোর্টে গেলে, সেখানে আমার ওপর হামলা করে আসামি আসাদুল ইসলাম। লোকজন নিয়ে আমার ওপর হামলা করে। মারধরের শিকার হয়ে একজন আইনজীবীর রুমে গিয়ে নিজেকে আত্মরক্ষা করি। পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসা নেই।
এ বিষয়ে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, এটা খুবই দু:খজনক। আদালত পবিত্র অঙ্গন। এখানে মানুষ বিচার চাইতে আসে। আদালতে এসে যদি মানুষ হেনস্থার শিকার হয় তাহলে খুবই নিন্দনীয়। আমি সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
গত ৪ মার্চ হাইকোর্ট তাদের ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। পরে ১০ মার্চ বিচারপতি শেখ জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের আগাম জামিন বাতিল করেন। সেই সঙ্গে আসামিদের ২ সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার বিজ্ঞ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আত্মসম্পণের নির্দেশ দেন।
গত ১৯ মার্চ ঢাকার সিএমএম আদালতে আত্মসমর্পন করে আসামিরা জামিন চাইলে আদালত তাদের বক্তব্য প্রথমে শোনার কথা বলেন। পরবর্তীতে বাদীপক্ষের বক্তব্য শোনা হবে বলে জানান তিনি। পরবর্তীতে কোন অজ্ঞাত কারণে বাদীপক্ষের কোন বক্তব্য না শুনেই আসামিদের ৪০৬/৪২০/৪৬৫/৪৬৭/৪৭১/৩৪ ধারার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্বেও তাদের জামিন দেন।
যদিও জামিনের ৫ দিন হয়ে গেলেও জামিন আদেশ প্রস্তুত হয়নি এখনও। এ বিষয়ে ঢাকার সিএমএম আদালতে যোগাযোগ করলেও কোন ফল পাওয়া যায়নি। এদিকে আসামিদের জামিনের পর থেকেই মামলা প্রত্যাহার করা জন্য বাদীকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী। ফলে মৃত্যুভয় সহ বড় ধরণের ক্ষতির আশংকা করছেন তিনি।
এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন ধরেননি। আসামিদের ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।
জাল-জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় অ্যাসরোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আসাদুল ইসলাম ও পরিচালক মোঃ আমির হোসাইন গত ১৯ মার্চ ঢাকার সিএমএম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। বিচারক রেজাউল করিম ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় তাদের জামিন আদেশ দেন।