সবুজবাংলা২৪ডটকম, ঢাকা : ঢাকা উত্তর সিটির উত্তরখান থানাধীন দোবাদিয়া হাজী আব্দুস সবুর মার্কেট সংলগ্ন নিজ বাড়িতে পরিবার পরিজনে সঙ্গে বসবাস করতেন জোবায়ের আহমেদ(৩৮)। ব্যক্তি হিসেবে জোবায়ের এক অতি সাধারণ ভাবে চলাফেরা করতেন। গত ১৩ জুলাই মাসে সারাদেশে একযোগে শুরু হয় কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোল। আর এ আন্দোলন ছাত্র-জনতার পাশে থেকে দেশের একজন দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে অংশ নেন জোবায়ের। গত ১৯ জুলাই(শুক্রবার) জুবায়েরে বাবা সবুর বেপারি জানতে পারেন কোটা আন্দোলনে অনেক সংঘর্ষ ও গোলাগুলি হচ্ছে এ কারনে জোবায়েরকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যেতে নিষেধও করেন। এদিকে জোবায়ের তার বাবা সবুর বেপারি কথাকে উপেক্ষা করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে উত্তরা এলাকায় ছাত্র-জনতার সঙ্গে অবস্থান করেন । এদিকে জোবায়ের আহমেদ রাজধানীর উত্তরা ৬ নং সেক্টরে বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্র হাসপাতালের সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অবস্থানের সময় পুলিশ-ছাত্রলীগ একত্রে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণ করতে থাকে। এমন সময় ছাত্র-জনতা ছত্র ভঙ্গ হয়ে দিকবিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে এমন সময় একটি গুলি পিছন থেকে জোবায়েরের পিঠ ভেদ করে বের হয়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে জোবায়ের আহমেদ রাজপথে লুটিয়ে পড়ে। রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ,এমতাবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার আগেই মৃত্যু কোলে ঢোলে পড়েন জোবায়ের আহমেদ। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ আগস্ট শহীদ জোবায়েরের বাড়িতে সংবাদমাধ্যম কর্মীরা গেলে তার বাবা সবুর বেপারি অশ্রুসিক্ত চোখে জানান,জোবায়ের আহমেদ তার ছোট ছেলে,আর যারা আমার সন্তানকে হত্যা করেছে তাদের বিচার চাই,তিনি আরো জানান,দুনিয়ায় সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে-“পিতার কাধে পুত্রের লাশ। তিনি বলেন ছেলে হারানোর “এ শোক আমি কেমন করে ভুলবো” এ নিহতের বিষয়ে জোবায়েরের মা সাংবাদিকদের সামনে কাঁদতে কাঁদতে বলেন,”আল্লাহ আমার সন্তানকে না নিয়ে আমাকে কেনো নিলেন না”! সন্তান হারা মায়ের কতটা কষ্ট কেউ কি বলতে পারে?
এ নিহতের স্ত্রী সাংবাদিকদের সামনে কাঁদতে কাঁদতে বলেন,” আমার দুইটা সন্তান ছোট ছোট আর আমি তাদের কাছে কি জবাব দেবো,তারা তাদের বাবার কোথায় জানতে চাইলে কি জবাব দেবো? তিনি আরো বলেন, “যারা আমার সন্তানদের এতিম করেছে,আমাকে করেছে বিধবা” তাদের অবশ্যই ফা়ঁসি হতে হবে এই বাংলার বুকে। অবুজ শিশুরা বলে তার বাবা কবরে,আর কখনো আসবে না। নিহত জোবায়েরের বড় ভাই কালাম তার কবরের সামনে যেয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন আর বলেন, গত ১৯ আগস্ট বিকেলে তার কাছে ফোন আসে জোবায়েরের শরিরের গুলি লেগেছে আর সে সময় ঘটনাস্থলে যেয়ে দেখেন রক্ত মাখা কাপড়ে শুয়ে আছে তার ছোট ভাই জোবায়ের এবং ততক্ষণে তিনি মারা গেছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ঐক্যে ফ্যাসিবাদ আওয়ামিলীগ সরকারের পদত্যাগ হয়েছে,কিন্ত আমার ছোট ভাই জোবায়ের তো আর ফিরলো না! আমি এই হত্যার বিচার চাই। তিনি আরো বলেন,” আমার ছোট ভাইয়ের কি অপরাধ ছিলো, কেনো গুলি করে হত্যা করা হলো,আমি হত্যাকারিদের ফাঁসি চাই। শহীদ জোবায়ের মৃত্যু পূর্বে স্ত্রী, দুই সন্তান,বাবা-মাসহ অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলার তথ্য মেলেনি।