সবুজবাংলা২৪ডটকম, ঢাকা : কেউ নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি খাদ্যদ্রব্য মজুত করলে তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। এ অপরাধের শাস্তি যাবজ্জীবন বা সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারাদ- এবং অর্থদ-ের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে ‘খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) বিল-২০২৩’ উত্থাপন করা হয়েছে। বিলের বিধান অনুযায়ী, পলিশিং ও কাটিংয়ের মাধ্যমে তৈরি মিনিকেট চাল বিক্রি ও সরবরাহ আইনগত অবৈধ হবে।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিলটি উত্থাপন করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
১৯৫৬ সালের ফুড (স্পেশাল কোর্ট) অ্যাক্ট এবং ১৯৭৯ সালের ফুডগ্রেইনস সাপ্লাই (প্রিভেনশন অব প্রিজুডিশিয়াল অ্যাক্টিভিটি) অর্ডিন্যান্স বাতিল করে নতুন এই আইনটি করা হচ্ছে।
সংসদে উত্থাপিত বিলে বলা হয়েছে, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণে সারা দেশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আদালত থাকবে। এই আদালত ‘খাদ্যদ্রব্য বিশেষ আদালত’ নামে অভিহিত হবে। এই আইনের অধীনে কিছু অপরাধের বিচার মোবাইল কোর্টেও করা যাবে। খাদ্যদ্রব্য বলতে যেকোনো প্রকার দানাদার খাদ্যদ্রব্য যথা: চাল, ধান, গম, আটা, ভুট্টা ইত্যাদিকে বোঝানো হয়েছে বলে বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সরকার নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য মজুত করলে বা মজুত সংক্রান্ত সরকারের কোনো নির্দেশনা অমান্য করা হলে, তা হবে অপরাধ। এর শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদ- বা সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারাদ- এবং অর্থদ-। তবে, এইরূপ অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, তিনি আর্থিক বা অন্য কোনো প্রকার লাভের উদ্দেশ্য ব্যতীত মজুত করেছিলেন তাহলে তিনি অনূর্ধ্ব ৩ মাস কারাদ- এবং অর্থদ-ে দ-িত হবেন। এই অপরাধ হবে অজামিনযোগ্য।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি পুরাতন খাদ্যদ্রব্য পলিশিং বা অন্য কোনো খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মিশ্রণ করে বা সরকার কর্তৃক খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহকালে সরকারি গুদামে রক্ষিত খাদ্যদ্রব্য বৈধ বা অবৈধভাবে সংগ্রহ করে, দেশে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে আমদানিকৃত খাদ্যদ্রব্য; বা সরকারি গুদামের পুরাতন বা বিতরণকৃত সিল বা বিতরণ করা হয়েছে, এমন চিহ্নযুক্ত খাদ্যদ্রব্য ভর্তি বস্তা বা ব্যাগ বা আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে খাদ্যদ্রব্যের পরিমাণগত বা গুণগত পরিবর্তন করে বা অন্য কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে সরকারি গুদামে সরবরাহ করলে, তা হবে অপরাধ। এর সাজা হবে সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদ- বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-। বিলের এই বিধান অনুযায়ী পলিশিং ও কাটিংয়ের মাধ্যমে তৈরি মিনিকেট চাল বিক্রি ও সরবরাহ আইনগত অবৈধ হবে।
কোনো ব্যক্তি খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রদত্ত বিতরণকৃত সিল বা বিতরণ করা হয়েছে এইরূপ চিহ্নযুক্ত সিল ব্যতীত সরকারি গুদামের খাদ্যদ্রব্য ভর্তি বস্তা বা ব্যাগ বিতরণ, স্থানান্তর, ক্রয় বা বিক্রয় করলে, তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এর সাজা সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদ- বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-।
কোনো ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন সম্পর্কিত কোনো মিথ্যা তথ্য বা বিবৃতি তৈরি, মুদ্রণ, প্রকাশ, প্রচার বা বিতরণ করলে, তা হবে অপরাধ। এর সাজা হবে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদ- বা সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-।
কোনো অনুমোদিত জাতের খাদ্যশস্য থেকে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যকে ওইরূপ জাতের উপজাত পণ্য হিসেবে উল্লেখ না করে ভিন্ন বা কাল্পনিক নামে বিপণন করলে বা খাদ্যদ্রব্যের স্বাভাবিক উপাদানকে সম্পূর্ণ বা আংশিক অপসারণ বা পরিবর্তন করে উৎপাদন বা বিপণন করলে সেটি অপরাধ হবে। এছাড়া, খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কৃত্রিম উপাদান মিশ্রণ করে উৎপাদন ও বিপণন করলে সেটিও হবে অপরাধ। লাইসেন্স ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স দিয়ে ব্যবসা করলেও তা অপরাধ হবে। এসব অপরাধের জন্য ২ বছর কারাদ- অথবা অন্যূন ১০ লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ- হবে।