সবুজবাংলা২৪ডটকম, দাকোপ : সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এবং নিরাপদ প্রজননের জন্য জুন থেকে আগষ্ট নব্বই দিন বনে সব ধরনের পাস পারমিট বন্ধ থাকে। এমনকি পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তিন মাস জেলেদের চরম কষ্ট বিবেচনায় তাদের দুর্ভোগ লাঘবে স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সরকার থেকে ৮৬ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। জেলেরা চাল পেলেও বনের সাথে যুক্ত মৌয়ালরা কোন সরকারি সহায়তা পায় না। এমনকি জেলে তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত জেলে কার্ডধারী সত্ত্বেও সব জেলেরা সরকার কর্তৃক প্রদত্ত চাল পায় না। এই কারণে অনেক অসহায় জেলে ও মৌয়ালরা দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে মধু সংগ্রহ করতে বনে প্রবেশ করেন। জীবন বাঁচাতে অনেকটা বাধ্য হয়েই তারা এমন ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে হেঁটে বিভিন্ন গাছে মধুর চাক খুঁজে বেড়ান। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় যে জেলে, বাওয়ালী এমনকি যে কোন যানবাহন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সুন্দরবনের অভয়ারণ্যগুলো দাপিয়ে বেড়ায় দুস্কৃতিকারী শুঁটকি কারবারিরা। বন অভ্যান্তরে টহল ফাড়ি থেকে চাঁদপাই রেঞ্জের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় নির্বিঘ্নে চলে এই “আগুনের কারখানা”। দুস্কৃতিকারীরা গহীন জঙ্গলে ছোট খালের শীষায় খটিঘর স্থাপন করে এবং অভয়ারণ্য থেকে বিষ প্রয়োগে চাকা চিংড়ি মাছ ধরে। এই মাছ খটিঘরে নিয়ে বনের কাঠ জ্বালিয়ে শুঁটকি তৈরি করে এবং উপযুক্ত সময়ে এই শুঁটকি মাছ চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেয়। দুস্কৃতিকারীরা তাদের নির্দিষ্ট এলাকায় কোন সাধারণ জেলে বা মৌয়ালকে দেখলেই তাদের কে ধাওয়া করে এবং অত্র এলাকার টহল ফাড়ীর বনরক্ষীদের দিয়ে ধরিয়ে দেয়।
চাঁদপাই রেঞ্জের চরাপুটিয়া, ঝাপসি, চাইলোবগী, নন্দবালা, মরা পশুর, আধারমানিক পার্শ্ববর্তী খুলনা রেঞ্জের আদাচাকি, ভদ্রা, নিশানখালী, বয়ারসিং, সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় চলে এই নিষিদ্ধ কর্মকা-। অনুসন্ধান করে জানা যায় চার পাঁচ জনের একটি চিহ্নিত সিন্ডিকেট চাকা চিংড়ি শুঁটকি তৈরির জন্য কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর থেকে খরচ বাদে ২৫% কমিশনে জেলেবহর (শুঁটকির কারিগর) নিয়ে আসে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বন অভ্যান্তরে তারা তিন মাস থেকে শুঁটকি তৈরি করে। এই শুঁটকি মাছ বিভিন্ন কোম্পানির ফিডের বস্তায় ভরে মালো বডি ট্রলার বা টুইন লঞ্চ দিয়ে মোংলার কাইনমারী, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র অথবা চায়না ঘাট দিয়ে পিকআপ অথবা ট্রাকযোগে চট্টগ্রামের রিয়াজ উদ্দিন পাইকারি শুঁটকি বাজারের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেয়। চট্টগ্রামে এই মাছ প্রতি কেজি ১২০০-২০০০ টাকা দরে বিক্রয় করা হয়।বিক্রিত টাকার সব ধরনের খরচ বাদ দিয়ে ৭৫% পায় কথিত জেলে বহর ও অবশিষ্ট ২৫% পায় সিন্ডিকেট। চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে এই সময়ে সুন্দরবনের পানি সর্বোচ্চ লবণ থাকে। দুস্কৃতিকারীদের খাবার পানি নিকটবর্তী টহল ফাড়ী থেকেই যোগান দেওয়া হয়। শুধু তাই না তেল খরচের সাথে অতিরিক্ত কিছু টাকা দিয়ে দুস্কৃতিকারীরা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বন বিভাগের বোট মাধ্যমেই নিয়ে আসে।
অবশ্য কদাচিৎ সহকারী বন সংরক্ষক অথবা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কিছু মাছ আটক হবার খবর ও প্রকাশ হয়। তবে তা একেবারেই নগণ্য।
সুন্দরবনে গত ২২ বছরে ২৭ বার অগ্নিকা-ে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতির কথা আমরা জেনেছি। কিন্তু অগ্নিকা-ের বড় একটা কারন যে এই শুঁটকি তৈরির চুল্লী সেটা কি জেনেছি কখনো!