সবুজবাংলা২৪ডটকম, দাকোপ : মহা প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আইলার ১৪ বছর অতি বাহিত হয়েছে। কিন্তু খুলনার দাকোপে আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ দু’টি ইউনিয়নের ৬৮৫টি পরিবার এখনো ঘরে ফিরতে পারেনি। আইলায় তাদের ভিটে বাড়ি গিলে খাওয়ায় এবং আর কোন জায়গা জমি না থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে তারা পুরানো ওয়াপদা ভেড়িবাঁধের উপর ঝুঁপড়ি এবং নদীর কূলে টোঙ ঘরে পরিবার পরিজন নিয়ে অত্যান্ত মানবেতর জীবন যাপন করছেন। জানা গেছে, গত ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলার ১৪ বছর অতি বাহিত হয়েছে। ২০০৯ সালের এই দিনে পৃথিবীর সর্ববৃহত ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট সুন্দরবনের উপকূলীয় এলাকা দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন জনপদে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আইলা। নিমিষেই লন্ডভন্ড করে দেয় উপজেলার ৩টি পোল্ডার। ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয় কামারখোলা ও সুতারখালী দুটি ইউনিয়ন। প্রান হারায় ১৬ জন, নিখোঁজ হয় ৭ জন, আহত হয় ১১ জন। নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পায় ৮/১০ ফুটেরও বেশি। পানির তোড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা ভেড়িবাঁধ ভেঙে কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। গৃহহীন হাজারো পরিবারের ঠাঁই হয় ওয়াপদা ভেড়িবাঁধের উপর। আইলার পর সরকারী ও বেসরকারী বরাদ্দের কোটি কোটি টাকা জনপ্রতিনিধিদের গাফিলতিতে পানিতে ভেসে যাওয়ার পর সরকারের অধিক অর্থ ব্যয় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভেড়িবাঁধ নির্মান ও ক্লোজার আটকিয়ে দূর্গত এলাকাকে ২০১০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী পানি মুক্ত ঘোষনা করা হয়। অধিকাংশ পরিবার ঘরে ফিরলেও নদী ভাঙনে ভিটে হারা ভূমিহীন অনেক পরিবার ফিরতে পারেনি। তখন সরকারী বেসরকারী ত্রান সহায়তাই ছিল তাদের বেঁচে থাকার ভরসা। গত ১৪ বছরে সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। ধীরে ধীরে বন্দ হয়ে গেছে সকল ধরনের ত্রান সহায়তা। কিন্তু সেখানকার জনসাধারণ এখন সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। ওই এলাকার মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস্য নদী থেকে চিংড়ী পোনা ও বনজ সম্পদ আহরন। বর্তমানে পোনা আহরণ নিষিদ্ধ। আর বনজ সম্পদ আহরণ অনেকাংশে কমে এসেছে। কর্মহীন মানুষ জীবিকার তাগিদে দেশের বিভিন্ন শহরে শ্রম বিক্রি করছেন।
কালাবগি এলাকার আজিজ মল্লিক, দীপক মন্ডল জানান, আইলায় ভিটে বাড়ী বিলিন হওয়ার পর তাদের আর কোন জায়গা জমি না থাকায় এখনো ওয়াপদা ভেড়িবাঁধের উপর পরিবার পরিজন নিয়ে বাস করছেন। সরকার পূনর বাসন না দিলে আর কোন দিন তাদের ঘরে ফেরা হবে না বলে জানান। সুতারখালী ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির বলেন, আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ ৫০০ পরিবারের জায়গা জমি না থাকায় এখনো ঘরে ফিরতে পারেনি। তারা পুরানো ওয়াপদা ভেড়িবাঁধের উপর পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। কর্মসংস্থান না থাকায় তারা এলাকার বাহিরে গিয়েও কাজকর্ম করে জিবিকা নির্বাহ করছে। তা ছাড়া জীবন ধারনে খাওয়ার পানিরও রয়েছে তীব্র সংকট। অনেকেই বাধ্য হয়ে পুকুরের অনিরাপদ পানি পান করে থাকে। অভ্যান্তরীন যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যান্ত নাজুক। মান সম্মত জীবন ব্যবস্থার কিছুই নেই আইলা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায়। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সরকার বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা না থাকায় সেই বাঁধ ও হুমকির মুখে পড়েছে। কামারখোলা ইউপি চেয়ারম্যান পঞ্চানন মন্ডল জানান, আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ ১৮৫ পরিবার এখনো পুরানো ওয়াপদা বেড়ীবাঁধের উপর বাস করছে। সরকারী খাস জায়গায় তাদের পূনর বাসনের চেষ্টা চলছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শেখ আব্দুল কাদের বলেন, আইলা পরবর্তী যে সব লোক ওয়াপদা ভেড়িবাঁধের উপর বাস করতো তাদেরকে পর্যায়েক্রমে সরকারী মুজিববর্ষের ঘরসহ আশ্রয়ন প্রকল্প গ্রহন করে ওই সব ক্ষতিগ্রস্থ লোকদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর যারা বাকি আছে তাদেরও দেওয়া হবে।