• শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন
  • [gtranslate]
শিরোনাম :

তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে নিহত ২৩০০ ছাড়িয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক / ১০ Time View
Update : সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

সবুজবাংলা২৪ডটকম, ঢাকা : দুই দেশে শত শত বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ায় মৃতের সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে
কয়েক দশকের ইতিহাসের সর্বোচ্চ মাত্রার ভূমিকম্পে তুরস্ক-সিরিয়ায় প্রাণহানির সংখ্যা ২ হাজার ৩০০ জন ছাড়িয়ে গেছে। সোমবার ভোরের দিকে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী এ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। এখনও অসংখ্য মানুষ ধসে যাওয়া হাজার হাজার ভবনের নিচে চাপা পড়ে থাকায় মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে কয়েক ঘণ্টা পরে আঘাত হানা ২য় ভূমিকম্পের ক্ষয়-ক্ষতির তথ্যও আসতে শুরু করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে, স্থানীয় সময় সোমবার ভোররাত ৪টা ১৭ মিনিটে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের গাজিয়ানতেপ শহরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
ভূমিকম্প আঘাত হানার সময় লোকজন ঘুমাচ্ছিলেন। এই ভূমিকম্পে দুই দেশে শত শত বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ায় মৃতের সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছে সংস্থাটি।
সিরিয়ায় ৮১০ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করার পর তুরস্ক এবং সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৩০০ ছাড়িয়েছে
তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থার (এএফএডি) তথ্য অনুযায়ী, তুরস্কে আজ ভোরের দিকের ভূমিকম্পে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ৪৯৮ জনে পৌঁছেছে। এএফএডি মহাপরিচালক অরহান তাতার বলেন, ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৪৯৮ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৬৩৪ জন। দেশজুড়ে ২ হাজার ৮৩৪টি ভবন ধসে গেছে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, সিরিয়ায় ৮১০ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করার পর তুরস্ক এবং সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৩০০ ছাড়িয়েছে।
এদিকে, তুরস্কের দক্ষিণের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে ভূমিকম্পের প্রথম আঘাত হানার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর সোমবার স্থানীয় সময় বেলা ১টা ২৪ মিনিটে দ্বিতীয় দফায় কেঁপে উঠেছে তুরস্ক। দ্বিতীয় দফায় আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫।
অগভীর এই ভূমিকম্প তুরস্কের একিনোজু শহরের চার কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে আঘাত হেনেছে। সেখান থেকে ৮০ মাইল দক্ষিণের কাহরামানমারাস প্রদেশে দ্বিতীয় ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির তথ্য নতুন করে আসতে শুরু করেছে। যে কারণে প্রাণহানি ও ভবন ধসে যাওয়ার ঘটনা আরও বাড়তে পারে বলে তুর্কি কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।
যদিও দ্বিতীয় ভূমিকম্প আঘাত হানার আগেই কাহরামানমারাসে প্রথম ভূমিকম্পে অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত থাকায় দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে ভূমিকম্পের প্রথম আঘাত হানার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর সোমবার স্থানীয় সময় বেলা ১টা ২৪ মিনিটে দ্বিতীয় দফায় কেঁপে উঠেছে তুরস্ক
স্বজনদের জীবিত উদ্ধারের আশায় অপেক্ষা
একজন বৃদ্ধা কুর্দি ভাষায় কান্নাকাটি করছেন। তার ভগ্নিপতি, ভাতিজি এবং ভাগ্নেরা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন। তাদের জীবিত উদ্ধারের আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তিনি।
কিছু অল্পবয়সী প্রতিবেশী তাকে সান্ত¡না দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ওই নারীকে সান্ত¡না দিয়ে তারা বলছেন, ‘কয়েক মিনিট আগে একজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তারা আপনার পরিবারকেও উদ্ধার করবে।’
তবে ওই নারীর পরিবার ১২ তলা ভবনের নিচতলায় বসবাস করতেন; যে কারণে তাদের জীবিত উদ্ধারের ব্যাপারে খুব একটা আশাবাদী নন তিনি।
তিনি বলেন, ‘তারা নিচতলায় ছিল। ঘুমাচ্ছিল। আমি জানি না কেউ তাদের কাছে পৌঁছাতে পারবে কি না… এখানে প্রচ- ঠান্ডা। আমার বাচ্চাগুলো ধ্বংসস্তূপের নিচে জমে যাবে।’
তবে তুরস্কে এমন অসংখ্য পরিবারের খোঁজ পাওয়া গেছে, যাদের পরিবারের কোনও সদস্যেরই সন্ধান মিলছে না। এমনকি স্বজন হারানোর শোকে যে কান্না করবেন কিছু পরিবারে এমন একজনও জীবিত নেই।
ভূমিকম্পের আর্থিক ক্ষতি ১০০ কোটি ডলার থেকে এক হাজার কোটি ডলারের মধ্যে হতে পারে; যা তুরস্কের জিডিপির প্রায় ২ শতাংশের সমান।
তুরস্কের একটি শহরের উদ্ধার তৎপরতার দৃশ্য তুলে ধরে বিবিসি লিখেছে, উদ্ধারযজ্ঞ চলার সময় আকস্মিকভাবে জনতা উচ্চস্বরে চিৎকার করছেন। তাদের হাততালি দিতেও দেখা যাচ্ছে। উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে কারও কাছে পৌঁছানোর সাথে সাথে লোকজন চিৎকার করছেন।
তবে যাকে উদ্ধার করা হচ্ছে, তার কোনও আত্মীয় নন এই হাততালি দেওয়া লোকজন। তবে কেউ যে উদ্ধার হচ্ছে, তাতেই তারা খুশি। সেখানকার পরিস্থিতিতে বর্ণনায় বিবিসি বলছে, কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে নেমে আসছে পিন-পতন নীরবতা। কারণ যাকে উদ্ধার করা হচ্ছে, তিনি মারা গেছেন।
বিবিসির তুরস্ক প্রতিনিধি হাতিস কামের দিয়ারবাকি থেকে বলেছেন, শহরটিতে হিমশীতল ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাতও হচ্ছে। আফটারশকের কারণে কোনও লোকজনই তাদের বাড়ির কাছাকাছি যেতে পারছেন না। যদিও তারা মাঝরাতে বাড়ি থেকে তাড়াহুড়ো করে চলে গেছেন… শীত নিবারণের জন্য জ্যাকেট এবং জুতো নেওয়ার জন্য বাড়ি ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছেন তারা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category