• সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ০৬:৫৮ পূর্বাহ্ন
  • [gtranslate]

নারায়ণগঞ্জের কালাদী মাদ্রাসার জমি নিয়ে উদ্ভট অভিযোগ!

নিজস্ব প্রতিবেদক / ২৭ Time View
Update : সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

সবুজবাংলা২৪ডটকম, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার কাঞ্চন পৌরসভার ‘কালাদী সাহাজউদ্দিন জামিয়া ইসলামীয়া কামিল মাদ্রাসা’। তিতাল্লিশ বছর আগে যৌথভাবে জমি ওয়াকফ করে মরহুম সাহাজউদ্দিনের নামে নামকরণ করার পর থেকে নিজেদের আধিপত্য বিরাজ করে মাদ্রাসার সকল প্রকার আয় ভোগ করছিল তার পরিবার। সাহাজউদ্দিনের নামে নামকরণ করাই যেন হয়েছিল মাদ্রাসাটির কাল। আর মৃত এই লোকটির নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকার ফায়দা লুটছিলো তার পরিবারের অন্যতম সদস্য আব্দুল হাই ও মোতালিব। অভিযোগ এলাকাবাসীর। এলাকাবাসী বলেন, এই পরিবারের লোকজনের দাম্ভিকতা, হিংসাত্মক কথাবার্তা ও আচার আচরণের কারণে অনেক মুসুল্লি মাদ্রাসা মসজিদের সমাজ ছেড়ে নতুন সমাজ গঠনের মাধ্যমে নতুন মসজিদ নির্মাণ করছেন।
কালাদী বড়বাড়ির প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও সুনামধন্য ব্যবসায়ী মরহুম হাজী আব্দুল খালেক মেম্বারের মেজো ছেলে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী মনির হোসেন বলেন, আমার বয়স তখন কম। যতদূর মনে পড়ে ওই সময় এখনকারমতো এতো কাছাকাছি ভালো মানের কোনো স্কুল কিংবা মাদ্রাসা ছিলো না। এমতাবস্থায় এলাকার ধর্মানুরাগী মানুষদের সঙ্গে পরামর্শ করেন আমাদের পূর্বপুরুষেরা। আমার জ্যাঠা (পিতার বড়ভাই) মরহুম হাজী নূরুল ইসলাম, আমার পিতা মরহুম হাজী আব্দুল খালেক মেম্বার, কাকা মরহুম মোহাম্মদ সেরাজুল ইসলাম, প্রতিবেশী মরহুম মহিজউদ্দিন, মরহুম সাহাজউদ্দিন, মরহুম হাজী জসিমউদ্দিন, মরহুম হাজী আব্দুল লতিফ, মরহুম ছমিরউদ্দিন মেম্বারসহ এলাকার সকলেই কালাদীতে একটি মাদ্রাসা করার উদ্যোগ নেন। সেই ধারাবাহিকতায় আজকের এই মাদ্রাসা। মাদ্রাসার বিশাল মসজিদটির জমি একাই দান করেছেন আমার জ্যাঠা মরহুম হাজী নূরুল ইসলাম। এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মাদ্রাসা নির্মাণের প্রাক্কালে মারা যান সাহাজউদ্দিন। তিনি জীবদ্দশায় কোনো জমি দান করে যেতে পারেননি। পরবর্তীতে তার ওয়ারিশগণ জমি দান করেন। পরিবারের লোকজনের আবদার রক্ষা করতে মাদ্রাসাটির নামকরণ করা হয় মরহুম সাহাজউদ্দিনের নামে। ওই সময় এলাকার অনেকেই এই নামকরণের বিরোধীতা করেছিল।
সময়ের পরিক্রমায় মাদ্রাসাটি তৈরির উদ্যোক্তাদের বেশীরভাগই মারা গেলে এটির বেহাল দশা হয়ে পড়ে। এলাকার গন্যমান্য লোকজনের পরামর্শে জমিদাতা সদস্য ও উত্তরসূরীরা মাদ্রাসাটি পরিচালনাসহ সার্বিক উন্নতির স্বার্থে পিএইচপি গ্রুপের কর্ণধার আলহাজ্ব সূফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান চৌধুরী ও দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খানের স্মরণাপন্ন হন। তারা দুজনই এলাকাবাসীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মাদ্রাসাটির উন্নয়নে এগিয়ে আসেন। নগদ অর্থ প্রদানসহ বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতা করছেন তারা। অথচ অতি দুঃখের বিষয়, তাদের দুজনের এতো সহযোগিতার পরও মাদ্রাসাটির আশানুরূপ উন্নতি হচ্ছিল না। কেন হচ্ছিল না তার রহস্য এলাকাবাসীর কাছে উম্মোচিত ও পরিষ্কার হয় দুদক কমিশনার সচিব মোজাম্মেল হক খান ও বিশিষ্ট দানবীর আলহাজ্ব সূফী মিজানুর রহমান চৌধুরী যখন শিক্ষাসহ অন্যান্য উন্নতির ব্যাপারে অধিকতর সোচ্ছার হন। মাদ্রাসার সভাপতি দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান এক মিটিংয়ে বলেন, ‘আমি এই মাদ্রাসার সভাপতি। অথচ আমার এই মাদ্রাসাটি ৪৭ হাজার টাকা ঋণগ্রস্থ। এতো সাহায্য গেলো কোথায়? ভাবতেই আমার লজ্জা হয়।’ তার বক্তব্য শুনে উপস্থিত কমিটির সকল সদস্যই নিরব হয়ে যান। সভাপতির বক্তব্যে দুদক কমিশনার বলেন, ‘আমি আমার বাবা-মার নামে দান করে এই ঋণ পরিশোধ করে দিয়েছি। দান করে জাহির করা ঠিক না। পরিস্থিতির কারণে আজ বলতে হলো। মহান আল্লাহ তায়ালা যেন আমাকে মাফ করেন। পরিস্থিতির কারণে বলতে হচ্ছে, এই ঋণ আমি আমার মরহুম মা-বাবার নামে দান করে পরিশোধ করে দিয়েছি।’ আব্দুল হাই, মোতালিব ও তাদের সহযোগিদের স্বেচ্ছাচারিতা লুটপাটের কারণে ডুবতে বসা প্রতিষ্ঠানটিকে রক্ষা করতে মাদ্রাসা সভাপতি মোজাম্মেল হক খান দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘পূর্বে যা হয়েছে তো হয়েছে। এখন থেকে ব্যাংক হিসাব আর তিনজনের নামে হবে না। হবে দুজনের নামে। কেউ যাতে আমার অজান্তে টাকা উত্তোলন করতে না পারে। খরচ করতে না পারে।’
এলাকাবাসী জানান, ইতোমধ্যে সাবেক প্রিন্সিপালের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন প্রিন্সিপাল নিয়োগ দেওয়া জরুরী হয়ে পড়ে। শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে ইন্টারভিউ নিয়ে নতুন প্রিন্সিপাল মনির হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। নতুন এই প্রিন্সিপাল আসার এক বছরের মধ্যেই তিনি তার দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। মাদ্রাসাটির আয় এখন আট লাখ টাকা। তিনি খান সাহেব ও সূফী সাহেবের সহযোগিতায় মাদ্রাসাটিকে ফাজেল থেকে কামিল করেছেন। এলাকাবাসী আরও জানান, সূফী মিজানুর রহমান চৌধুরী তার নিজস্ব অর্থায়নে তিনতলা একটি ভবন তৈরি করে দিয়েছেন। আরো একটি বিশাল বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। এটির কাজ চলছে। ভবন নির্মাণে কেউ যাতে দুর্নীতি করতে না পারে সেজন্যে তিনি মাদ্রাসা কমিটির সদস্য আলহাজ্ব জাকির হোসেনকে এটির নির্মাণের দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি সকলের সহযোগিতায় খুব সুন্দরভাবে কাজ করছেন বলেও এলাকাবাসী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। লুটপাটের সকল রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আব্দুল হাই-মোতালেব চক্র ক্ষিপ্ত হয়ে সূফী মিজানুর রহমান চৌধুরী, দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান, প্রিন্সিপাল মনির হোসেন, সদস্য জাকির হোসেনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করছে। মাদ্রাসার জমি দখলের নাটক সাজিয়ে নিজেদেরকে মাদ্রাসাটির শুভাকাঙ্খি প্রমাণের চেষ্টা করে লুটপাটকারি আব্দুল হাই গং। কোনো প্রকার রেজুলেশন বা মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির অনুমতি না নিয়ে হাজী মনির হোসেনের পৈত্রিক সম্পত্তিতে মাদ্রাসার জমি আছে উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগ করে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম হাজী আব্দুল খালেক মেম্বারের সুযোগ্য সন্তান ব্যবসায়ী হাজী মনির হোসেন বলেন, মাদরাসার জায়গা যারা দান করেছে তাদের মধ্যে আমার পূর্বপুরুষও রয়েছে। মাদরাসার ভেতরে ওয়াকফর বাইরে এখনো আমাদের উনিশ শতাংশ জমি আছে। যে জমি দখল করেছি বলে অভিযোগ করা হয়েছে সেটি পয়তাল্লিশ বছর ধরে আমাদের দখলে। কাগজপত্র সব ঠিক, সেখানে মিল-ফ্যাক্টরি আছে। তারপরেও যদি নিরপেক্ষ লোকজনের উপস্থিতিতে সরকারি সার্ভেয়ারের মাধ্যমে মেপে আমার কাছে মাদরাসার কোনো জায়গা আছে বলে প্রমান হয় তাহলে সসন্মানে আমি তা ছেড়ে দেবো। আমি পেলে আমারটাও দিতে হবে। জমির বিষয়ে কারো মুখের কথার কোনো দাম নাই, এখানে কাগজপত্র দলিল দস্তাবেজই কথা বলবে। তিনি বলেন, মাদরাসার জায়গা দখল করেছি বলা হচ্ছে কিন্তু মাদরাসা কর্তৃপক্ষ তো আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেনি। মামলা করেছে এলাকায় যারা আমার প্রতিপক্ষ তারা। সাংবাদিকদের কাছেও তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে। হাজী মনির হোসেন আরও বলেন, আমাদের মধ্যে জমি থাকলে অবশ্যই আমরা তা দিয়ে দিবো। আমরা পেলে আমাদেরটাও ফেরত দিতে হবে। তিনি বলেন, একাধিকবার কাঞ্চন পৌরসভার সার্ভেয়ার মেপেছেন। তারা তা মানে না। এলাকার মেয়র মহোদয়কেও তারা মানে না। দুঃখ প্রকাশ করে হাজী মনির হোসেন বলেন, আমার ছোটভাই আমীর হোসেনের ছেলে আফ্রিদি তার পৈত্রিক জমিতে বাড়ি করছে। সেটার ছবি তুলে পত্রিকায় দিয়ে বলা হচ্ছে আমার দখলকৃত জমি। মিথ্যাচারেরও একটা সীমা থাকা উচিৎ। সাংবাদিকতা একটি মহৎ পেশা। সাংবাদিকদের আমরা সম্মান করি। ছবিটি ছাপার আগে সাংবাদিকদের উচিত ছিলো ভালো করে খোঁজখবর নেওয়া। মনির হোসেন তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার-চক্রান্তের প্রতিবাদ করে বলেন, আমি মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি, আমাদের এলাকার মাননীয় সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক, আইজিপি, জেলা এসপি, এএসপি, রূপগঞ্জ থানার ওসিসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সহযোগিতা কামনা করছি।
মাদ্রাসাটির নাম পরিবর্তনের দাবি: একাধিক বাড়ির কাছ থেকে জমি নিয়ে মাদ্রাসা করে এক বাড়ির কারো নামে নামকরণের মাধ্যমে ওই বাড়ির লোকজন এটিকে পৈত্রিক সম্পত্তি বানিয়ে লুটপাট করেছে মাদ্রাসাটিতে। ৪২ বছরে ৪৭ হাজার ২০০ টাকা দেনা ছিল প্রতিষ্ঠানটির। চক্রটি লুটপাট করেছে ভর্তি ফি, পরীক্ষার ফি, বেতনের টাকা। বর্তমান প্রিন্সিপাল আসার পর প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মানোন্নয়নসহ আয়ও বেড়েছে। এলাকাবাসী জানায়, মরহুম সাহাজউদ্দিন তার জীবদ্দশায় এক ইঞ্চি জমিও মাদ্রাসায় দান করেননি। তার মৃত্যুর পর ওয়ারিশগন জমি দেন। আব্দুল হাই গং আধিপত্য বিস্তার করে তার চাচা মহিজউদ্দিনের কবর দেয় মাদ্রাসা গেইটের ভেতরে। কবরটির কারণে মসজিদের বারান্দাও নির্মাণ করা যাচ্ছে না। এছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের ছুটির সময় তাদের বের হতে অনেক কষ্ট হয়। এই পরিবারের লোকজনের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এলাকাবাসী দাবি করেছেন, কারো নামে নয়, মাদ্রাসাটিকে শুধুমাত্র ‘কালাদী জামিয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা’ নামকরণ করা হোক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category