সবুজবাংলা২৪ডটকম, নোয়াখালী : নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় নিজের মাকে পাঁচ টুকরো করে নৃশংস হত্যা মামলায় ছেলেসহ ৭ আসামিকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। রায়ে দন্ডিত আসামিদের প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে আদালত।
দন্ডিত আসামিরা হলেন, সুবর্ণচর উপজেলার জাহাজমারা গ্রামের নিহতের ছেলে হুমায়ুন কবির (৩২), মিলন মাঝির ছেলে মো. নিরব (২৮), নুর আলমের ছেলে নুর ইসলাম (২৮) প্রকাশ কসাই নুর ইসলাম, দুলাল মাঝির ছেলে আবুল কালাম মামুন (৩০), মো. হারুনের ছেলে মিলাদ হোসেন সুমন (২৮), মারফত উল্যার ছেলে মো. হামিদ (৩৫), মমিন উল্যার ছেলে ইসমাইল (৩৫)। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ নিলুফার সুলতানা এ রায় ঘোষণা করেন।
জেলা জজ আদালতের পিপি গুলজার আহমেদ জুয়েল জানান, ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর বিকেলে সুবর্ণচর উপজেলার জাহাজমারা গ্রামের একটি ধানখেত থেকে গৃহবধূ নুর জাহানের (৫৮) মাথাসহ দুই টুকরো উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন একই খেত থেকে মরদেহের আরও তিন টুকরো উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় প্রথমে নিহত নারীর ছেলে হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। তদন্তের এক পর্যায়ে সন্দেহভাজন হিসেবে মো. নীরব ও কসাই নুর ইসলাম নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যা মামলার বাদী নিজেই জড়িত বলে তথ্য বেরিয়ে আসে। এরপর পুলিশ হুমায়ুনকে প্রধান আসামি করে অন্য একটি মামলা করে। ছেলে হুমায়ুন কবির সহ মামলার ৫ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। স্বীকারোক্তিতে তারা রোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের বিবরণ দেয়। ২৭ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে রায় ঘোষণা করেন বিচারক।
মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, নিহত নুর জাহান বেগমের ছেলে তার সহযোগীদের নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে। নিহত নারীর দুই সংসারের দুই ছেলে ছিল। আগের সংসারের ছেলে বেলাল তার মাকে জিম্মায় রেখে কয়েকজনের কাছ থেকে সুদের ভিত্তিতে চার লাখ টাকা ঋণ নেয়। তবে ঋণ রেখে দেড় বছর আগে বেলাল মারা যায়। এরপর ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য তার পরের সংসারের ভাই হুমায়ুনকে পাওনাদাররা চাপ প্রয়োগ করে। হুমায়ুন তার মাকে বিষয়টি অবহিত করেন। এ সময় তার মা ১৩ শতক জমি বিক্রি করে এ ঋণ পরিশোধ করতে বলেন। হুমায়ুন জবাবে, মাকে জানান তার মালিকানাধীন ১৪ শতক ও বেলালের স্ত্রীর মালিকানাধীন ১০ শতক জমি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করা হোক। এতে তার মায়ের অসম্মতি ছিল। অন্যদিকে ওই নারী তার ভাই দুলালের কাছে ৬২ হাজার ৫০০ টাকা পাওনা ছিল। পাওনা টাকা পরিশোধ করার জন্য সে তার ভাইকে প্রায় চাপ প্রয়োগ করত। এ কারণে হুমায়ুনের মামাতো ভাই কালাম ও মামাতো বোনের জামাতা সুমন তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। এছাড়া তার প্রতিবেশী ইসমাইল ও হামিদেরও বেলালের জমির প্রতি লোভ ছিল। এজন্য তারাও হুমায়ুনকে প্রত্যক্ষ হত্যাকা-ে সহযোগিতা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ অক্টোবর রাতে ওই নারীকে প্রথমে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। পরে লাশ পাঁচ টুকরো করে প্রতিবেশী পাওনাদারদের ধানখেতে রেখে আসা হয়। হত্যাকা-ে ব্যবহৃত মাংস কাটার ধারালো অস্ত্র, বটি, একটি কোদাল ও নারীর পরনে থাকা শাড়ি উদ্ধার করে পুলিশ।