নিজস্ব প্রতিনিধি : কালিয়াকৈর (গাজীপুর): গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মামলার বাদীর বিচারের দাবিতে লাশ নিয়ে প্রতিবাদ করেছে নিহতের পরিবার ও গ্রামবাসী। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় উপজেলার চাপাইর সীমার পার এলাকায়। গত দুই মাস কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় গত রবিবার রাতে আসামি নেহাল উদ্দিনের (৬৫) মৃত্যু হয়।
কাশিমপুর কারাগার, এলাবাসী ও পুলিশ জানায়, উপজেলার বাগচাপাইর গ্রামের মৃত আমির উদ্দিনের ছেলে শিপন মিয়া তার তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া ছোট বোনকে গত ৬ নভেম্বর সকালে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ তুলে মুদি দোকানদার কানু মিয়ার ছেলে নেহাল উদ্দিনকে (৬৫) মারধর করে রক্তাক্ত জখম করেন। এসময় গ্রামবাসী নেহাল উদ্দিনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। এ ঘটনায় কালিয়াকৈর থানায় ওই দিনই শিপন মিয়া বাদী হয়ে তার ছোট বোনকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ তুলে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৮ নভেম্বর অসুস্থ অবস্থায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গাজীপুর আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করে পুলিশ। জেলা কারাগার থেকে এক সপ্তাহ পরেই কাশিমপুর কারাগারে পাঠান বন্দি নেহাল উদ্দিনকে। কাশিমপুর কারাগার-১ এ গত রবিবার রাতে নেহাল উদ্দিন মারা গেলে নিজ গ্রাম বাগচাপাইরসহ আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল সোমবার বিকেলের দিকে নিহত নেহাল উদ্দিনের লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে শত শত গ্রামবাসী নিহতের বাড়িতে ভিড় করেন।
এ সময় চাপাইর ইউপি (৯নং ওয়ার্ড) সদস্য মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে মিথ্যা মামলার বাদী শিপন মিয়ার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এসময় বাদীর বিচার না হওয়া পর্যন্ত নিহত নেহাল উদ্দিনকে জানাজায় বাধা দেন। নিহতের নাতি রাকিব মিয়া বলেন, আমার দাদাকে বিনা দোষে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। মিথ্যা অভিযোগে মামলা দেয়। আমার দাদা নেহাল উদ্দিনকে মারধরের কারণেই কারাগারে মারা গেছেন। আমরা মিথ্যা মামলার বাদীর বিচার দাবি করছি।
চাপাইর ইউপির ৯নং ওয়ার্ড সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন জানান, একই এলাকার যুবক শিপন মিয়া মিথ্যা ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে মুদি দোকানদার নেহাল উদ্দিনকে মারধর করে। পরে মিথ্যা মামলা দিলে পুলিশ অসুস্থ অবস্থায় তাকে জেলহাজতে পাঠান। বাদীর বিচার ও গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত তার লাশ কবর দিতে দেওয়া হবে না। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত ৮টা গ্রামবাসী ও নিহতের স্বজনরা নেহাল উদ্দিনের জানাজা দিতে দেয়নি।
এদিকে কাশিমপুর কারাগার কর্তৃপক্ষ জানান, রবিবার রাত আড়াইটার দিকে গাজীপুর তাজ উদ্দিন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নেহাল উদ্দিনের মৃত্যু হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে কারাগারের ভেতর হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করে বন্দি নেহাল উদ্দিন। এ সময় তাকে কারা হাসপাতলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত আড়াইটার দিকে মারা যান। কালিয়াকৈর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলায় ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর থেকে তিনি এ কারাগারে বন্দি ছিলেন। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর সিনিয়র জেল সুপার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আমিরুল ইসলাম জানান, আইনি প্রক্রিয়া শেষে নিহতের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কালিয়াকৈর থানার ওসি মো. আকবর আলী খান জানান, মৃত নেহাল উদ্দিনের লাশ জানাজায় বাধা দেওয়া হচ্ছে এরকম কোনো তথ্য নেই আমার কাছে। এ ব্যাপারে কেউ কিছু বলেনি। তবু খোঁজ-খবর নিয়ে জানার চেষ্টা করছি।